আজ শুক্রবার, ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে আলোচনায় কায়সার-মান্নান ব্যাকফুটে খোকা

কায়সার-

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাউসার ও পদত্যাগ করা সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা জনগনের মতামতে ব্যাকফুটে রয়েছেন। সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান ও এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদের প্রতি রয়েছে সাধারন মানুষের রয়েছে একছত্র বিশ্বাস।

আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন না দেয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বহু ভক্তবৃন্দ ব্যাথিত হয়েছে বলে আমাদের সোনারগাঁ সংবাদদাতা জানিয়েছেন। অনেকের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভ ভোটের ব্যালেটে প্রতিফলিত হবে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

বিএনপির জেলা কমিটির সহ সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সময়ে নির্বাচনে ওই উপজেলার প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও মোশারফ হোসেনের সাথে পাল্লা দিয়ে ভোটের যুদ্ধে জয়ী হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলায় তার রয়েছে বিশাল একটি ভোট ব্যাংক।

যা আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের সকল আসনের মধ্যে এ আসনে অবাক করার মতো একটি ফলাফল দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন সাধারন ভোটারগন। সোনারগাঁ আসনে মূলত ভোটের লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয়তাবাদী দলের মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের মধ্যে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা বিগত নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।

ফলে এবারের প্রতিযোগীতামূলক নির্বাচনে তার পক্ষে মাঠে নেই খোদ মহাজোটের অনেক হেভিওয়েট নেতারাই। ভোটারদের মতে যদি এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে তিনি জামানত হারতে পারেন।

সোনারগাঁ উপজেলায় বৈদ্যের বাজার, বারদী, নোয়াগাঁও, জামপুর, সাদিপুর, কাঁচপুর, সনমান্দি, মোগরাপাড়া, পিরোজপুর ও শম্ভুপুরা মোট ১০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৩৭ জন। পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬১ জন। মহিলা ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৬ জন। এ আসনে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯ হাজার ৬১৩ ভোট, বিএনপি ৫০ হাজার ৭৬৯ ভোট, জাতীয় পার্টি ৮ হাজার ১৬৬ ভোট ও অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ৫ হাজার ৫২১ ভোট।

৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৮ হাজার ৫২৯ ভোট ও বিএনপি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৭৯১ ভোট। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫৪ হাজার ৬৮৩ ভোট ও বিএনপি পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১ ভোট। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৯ ভোট ও বিএনপি পেয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬২ ভোট।

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন খোকা । ৫ম জাতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৫ জন, ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৫ জন, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৫ জন, ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৩ জন।
৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে রেজাউল করিম নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আবুল হাসনাত। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষের প্রতীকে ফের রেজাউল করিম নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন ফের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আবুল হাসনাত। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ৩য় বারের মত রেজাউল করিম নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আবু নূর মুহাম্মদ বাহাউল হক।

৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে রেজাউল করিম। ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জানা গেছে, সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠ আকড়ে ধরেছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। সেই সঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন তিনি। তরুণ বয়সে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। ওই সময় তার চার পাশে দুষ্ট লোকজনদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের দোষের ভাগিদার হয়েছিলেন কায়সার হাসনাত। গত জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের নেতৃত্বে থাকায় জাতীয় পার্টিকে সোনারগাঁও আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। নেতাকর্মীদের এবার জোরালো দাবি সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে এবং নৌকা প্রতীকে কায়সার হাসনাতকেই মনোনয়ন দিতে হবে। তবুও তাকে মনোনয়ন না দেয়ার ক্ষুব্দ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০০১ সালের পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার আমলে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম করে আলোচনায় আসনে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তার বাবা আবুল হাসনাত দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও এমপি হতে পারেননি। তবে এমপি হয়েছিলেন তার ছেলে কায়সার হাসনাত তার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিমকে হারিয়ে। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে কায়সার হাসনাতকে নির্বাচিত করেছিলেন। ফের একবার তারা কায়সার হাসনাতকে এমপি হিসেবে দেখতে চান।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এখানে নৌকা আর ধানের শীষের লোকই বেশি। লাঙলের লোক এখানে কয়েকজন মাত্র। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী নেই। তারপরও কায়সারই নৌকার প্রার্থী। আর ধানের শীষের প্রার্থী মান্নান। লড়াই তাদের দুজনের মধ্যেই হবে।

বর্তমান সংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা আবারও লাঙলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নামার কোনো ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেননি। বলা হচ্ছে, এই আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপিকে কেউই মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া খোকার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথেও ভালো সম্পর্ক নেই। তার মধ্যে আবারও স্থানীয় জাতীয় পার্টির সাথেও তার রয়েছে গ্রুপিং। ফলে এবারের নির্বাচনটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে আজহারুল ইসলাম হামলা-মামলার শিকার, কারা নির্যাতিত ত্যাগী নেতা। উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় সভা করে মান্নানকে নির্বাচিত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মান্নান নেতা-কর্মীদের নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আলোচনা সভা করেছেন। উপজেলার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য কমিটি গঠন করেছেন। অপরদিকে, সংস্কারবাদী রেজাউল করিম মাঠে না থাকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন মান্নান। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘দলের হাইকমান্ড আমাদের দুর্দিনের নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানকে ধানের শীষে সোনারগাঁ থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আর আমরা তাকে বিজয়ী করে আনব।’

কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক বলেন, ‘দুর্দিনে যিনি আমাদের পাশে ছিলেন তিনি হলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। এ আসনে ধানের শীষে তাকে মনোনয়ন দিলে তার বিজয় নিশ্চিত।’

সংস্কারবাদী নেতা রেজাউল করিমকে সোনারগাঁয়ের মানুষ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন বসন্তের কোকিল। সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে সংস্কারবাদীদের কোনো স্থান নেই। সোনারগাঁবাসী সংস্কারবাদী নেতা রেজাউল করিমকে বয়কট করেছে। তাকে কোনো আন্দোলন-কর্মসূচিতে দেখা যায় না। সব সময় যাকে কাছে পাই তিনি হলেন আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। ধানের শীষে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।’

সাধারণ ভোটরার বলছেন, এখানে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখানে দ্বিমুখী লড়াই হবে। আর সেটি হবে মান্নান ও কায়সারের সাথে। এবারের নির্বাচনে খোকা পাত্তা পাবেন না। তবে, শেষ হাসি ঠিক কে হাসতে পারেন, সেটি বলা এখন মুশকিল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ